আয়-করে ছাড় মিলে যেসব বিনিয়োগে

আয়কর নিয়ে প্রায় সবাই অস্বস্তি ও আতঙ্কে থাকেন। কর মৌসুম এলেই এ আতঙ্ক বেড়ে যায়। অনেক কষ্টে উপার্জন করা অর্থ থেকে বড় অঙ্কের টাকা কর পরিশোধে ব্যয় করতে কার-ই-বা মন চায়। কিন্তু তবু আইনের বাধ্যবাধকতা আর দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কর দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তবে প্রতি বছর সরকার আয়করে কিছু ছাড় বা রেয়াতও দিয়ে থাকে। একটু উদ্যোগী হলেই কিন্তু ছাড়ের এই সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব।

আইন অনুসারে কিছু নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ করলে আয়করে ছাড় পাওয়া যায়। তাই জীবনযাত্রা ব্যয় থেকে কিছু টাকা সাশ্রয় করে নির্দিষ্ট খাতের যে কোনো একটিতে বিনিয়োগ করে কমানো সম্ভব আয়করের চাপ।

কর সমন্বয় করার সবচেয়ে সহজ ও ভালো উপায় হলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা। ভবিষ্য তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা রাখলেও এই সুবিধা পাওয়া যায়। আবার শেয়ার কিনলেও মিলে এমন কর ছাড়। সব মিলিয়ে ২৫টি খাত আছে,যেখানে বিনিয়োগ করলে বছর শেষে সহজেই করের বোঝা কমিয়ে আনা সম্ভব।

 

কোথায় বিনিয়োগ করবেন

গত আয়বছরের আয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড় পাওয়ার জন্য ২৫টি খাতকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। সাধারণত প্রতিবছরই এই খাতগুলোতে বিনিয়োগে করছাড়ের সুবিধা থাকে। খাতগুলোর মধ্যে আছে সঞ্চয়পত্র কেনা;সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা;স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা;জীবনবিমার প্রিমিয়াম;কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা;সুপার এনুয়েশন ফান্ডে দেওয়া চাঁদা; যে কোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে (ডিপিএস) বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ;পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার,স্টক,মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ; জাতির জনকের স্মৃতিরক্ষায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান।

এ ছাড়া জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের কিছু খাতে দান করলেও কর ছাড় পাওয়া যাবে। এগুলো হলো জাকাত তহবিল; এনবিআর অনুমোদিত দাতব্য হাসপাতাল; প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠান;মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর; আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক; আহ্ছানিয়া ক্যানসার হাসপাতাল; আইসিডিডিআরবি; সিআরপি (সাভার); সরকার অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; এশিয়াটিক সোসাইটি;ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতাল এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিরক্ষায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান।

কর-ছাড়ের সীমা

বিনিয়োগ করলেই আয়করে যে কোনো পরিমাণ ছাড় পাওয়া সম্ভব নয়। আইনে ছাড়ের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া থাকে। গত আয়কর বছরের (২০১৮-১৯) জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসারে কোনো করদাতা তাঁর বার্ষিক মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করলেও কর রেয়াত ছাড় পাওয়ার সুযোগ আছে। বিনিয়োগের কত অংশে কত হারে কর বসবে,সেটি ওই প্রজ্ঞাপনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

কোনো করদাতার আয় যদি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়,তবে তিনি ১৫ শতাংশ হারে কর রেয়াত পাবেন। ওই ব্যক্তি তাঁর আয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। তাহলে ওই করদাতা ওই বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ কর ছাড় পাবেন। এর মানে হলো,ওই ব্যক্তি বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের পরিমাণ সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা। বছর শেষে করের পরিমাণ যা–ই হোক না কেন,ওই কর রেয়াত হিসাবে সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা বাদ যাবে।

উদাহরণ দিয়ে বলা যায়,কোনো করদাতার বার্ষিক আয় যদি ১০ লাখ টাকা হয়,করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ হিসাব করলে ওই ব্যক্তির করযোগ্য আয় হবে সাড়ে সাত লাখ টাকা। ওই সাড়ে সাত লাখ টাকার প্রথম চার লাখ টাকার ১০ শতাংশ হারে ৪০ হাজার টাকা,পরের সাড়ে তিন লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ হারে সাড়ে ৫২ হাজার টাকা কর যোগ হবে। সব মিলিয়ে ওই ব্যক্তির মোট কর হবে সাড়ে ৯২ হাজার টাকা। বিনিয়োগের জন্য ওই করদাতা কর ছাড় পাবেন সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা। ফলে রেয়াত সুবিধার পর বাস্তবে ওই করদাতাকে কর দিতে হবে ৫৫ হাজার টাকা।

চলতি অর্থবছরের অর্ধেক সময় ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে। তাই চলতি বছরের আয়ের উপর রেয়াত বা ছাড় পেতে হলে এখনই নিতে হবে প্রস্তুতি। বিনিয়োগ করতে হবে আলোচিত খাতগুলোর যে কোনো একটিতে।