কঠিন নয় ধনী হওয়া

জগতে কে-না একটু ভাল থাকতে চায়। কে-না চায় একটু সুখ,স্বস্তি।জীবন চলুক সচ্ছলতায়,স্বাচ্ছন্দ্যে,সন্তানের মাথার উপর থাকুক আর্থিক নিরাপত্তার ছায়া-এমন চাওয়া প্রতিটি মানুষের।সব মানুষের মনেই গোপনে উঁকি দেয় একটু ধনী হওয়ার স্বপ্ন।

কিন্তু প্রতিযোগিতার এই বাজারে অর্থ-বিত্ত অর্জন সহজ কাজ নয়। চাকরি বা ছোটখাটো ব্যবসা করে বেশি আয় সম্ভব হয় না।অন্যদিকে প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকায় ব্যয় চলে যায় লাগামের বাইরে। তাই বলে হাল ছেড়ে দিলে তো চলবে না। সীমিত আয়ের মাধ্যমেই কীভাবে কিছুটা ধনী হওয়া যায় তার চেষ্টা করতেই হবে। বুঝেশুনে চেষ্টা করলে ফলও আসবে বৈকি।তবে তার জন্য প্রয়োজন হবে সঠিক পরিকল্পনা,পরিশ্রম ও ধৈর্য।

বিশেষজ্ঞরা অনেক গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এমন কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যেগুলো অনুসরণ করলে স্বল্প আয়েও নিজের অবস্থা বদলানো সম্ভব;সম্ভব একটু ধনী হওয়া।আর সেটি অসৎ কোনো উপায়ে নয়,সৎ পথে থেকেই।

বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন সংবাদপত্রে নানা সময়ে প্রকাশিত বিশেষজ্ঞদের মতামতের আলোকে আপনাদের জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আমার টাকা

ইতিবাচক চিন্তা করুন

ধনী হতে চাইলে সবসময় ইতিবাচক থাকতে হবে।পরিকল্পনা,পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকলে ধনী হওয়া সম্ভব–অন্তর দিয়ে এটি বিশ্বাস করতে হবে।আমি পারবো-এমন আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করতে হবে।জীবনে অনেক ভাল সময়,খারাপ সময় আসে;কোনো সময়েই আশা হারালে চলবে না।ইতিবাচক চিন্তাকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।

সঞ্চয় শুরু করুন ছাত্রজীবন থেকেই

সঞ্চয় হচ্ছে আপনার বড় হওয়ার পথের জ্বালানি শক্তি।তাই যত আগে থেকে সম্ভব সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা ভাল।স্কুলের টিফিনের পয়সা থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে,অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে তখন থেকেই কিছু সঞ্চয় করা সম্ভব।

তবে ছাত্রজীবনে কেউ সঞ্চয় করতে পারেননি বলেই ভাবার কারণ নেই যে, সময় ও সুযোগ ফুরিয়ে গেছে। সঞ্চয় শুরু হোক আজ থেকেই।

কম বয়সেই টাকা আয়ের চেষ্টা করুন

যত আগে থেকে আপনি আয় করা শুরু করবেন,ধনী হওয়ার পথে ততই এগিয়ে থাকবেন।তাই কোনো কাজ ছোট না বড়-সেটি না ভেবে যখনই সুযোগ আসে কাজে লেগে পড়ুন। সেটি হতে পারে চাকরি, হতে পারে ব্যবসা, হতে পারে টিউশনি। কে কোনভাবে মূল্যায়ন করবে, সেটি নিয়ে ভাবা জরুরি নয়; জরুরি হচ্ছে আর্থিকভাবে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়ানো।

চলুক আয় বাড়ানোর চেষ্টা

অফিসে ওভারটাইম করে অথবা অফিস শেষে অন্য কোনো কাজের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকলে সেটি কাজে লাগান। তবে কোনো কাজে যদি অফিসের নিষেধাজ্ঞা বা আপত্তি থাকে, তাহলে সে পথে যাবেন না। কারণ স্থায়ী চাকরিটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিতে আউটসোর্সিং এর নানা কাজ আছে, যেটি আপনার অফিসের কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন।

ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবার মান বাড়িয়ে, সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করে, উদ্ভাবনী পণ্যের মাধ্যমে বিক্রি ও মুনাফা বাড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

নিয়মিত সঞ্চয় করুন

আপনার আয় যা-ই হোক না কেন, সেখান থেকেই নিয়মিত সঞ্চয় করার চেষ্টা করুন। আপনি আপনার আয়ের কত শতাংশ সঞ্চয় করতে চান, তার একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করুন। কোনো মাসে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে সঞ্চয় করা সম্ভব না হলে পরের মাসে ব্যয় কাটছাঁট করে হলেও আগের মাসের ঘাটতিটি পূরণ করে নিন।

বিনিয়োগে থাকুক আপনার টাকা

সচল টাকাকে অচল করে ঘরে ফেলে রেখে কোনো লাভ নেই। বরং এটি নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। টাকা ঘরে পড়ে থাকলে তা বাড়বে না, বরং তা কমে যাবে। কারণ প্রতি বছরই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, বিপরীতে কমে টাকার ক্রয় ক্ষমতা বা টাকার মান। ধরা যাক, চলতি বছরে ৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হবে। এর অর্থ বর্তমানে আপনি একটি পণ্য ১০০ টাকায় কিনলে আগামী বছর সেটি কিনতে ১০৭ টাকা লাগবে। কথাটিকে অন্যভাবে বলা যায়, বর্তমানে ১০০ টাকায় যে পরিমাণ পণ্য কিনছেন, আগামী বছর এর থেকে কম পণ্য পাবেন আপনি। তাই বিনিয়োগে মনোযোগ দিতে হবে, যাতে টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে।

ঝুঁকি ও মুনাফার মধ্যে সমন্বয়

ধনী হতে হলে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের বিকল্প নেই। কিন্তু ভুল জায়গায় সঞ্চয় অথবা বিনিয়োগের ফলে ধনী হবার পরিবর্তে আপনি সর্বস্বান্ত হয়ে যেতে পারেন। অন্যদিকে অতিমাত্রায় রক্ষণশীলতার কারণে আপনার টাকার কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি না-ও হতে পারে। টাকার পরিমাণ যদি মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হারে বাড়ে তাহলে বাস্তবে আপনার টাকা না বেড়ে কমতে থাকবে। যদি মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ হয়, আর এর বিপরীতে আপনার প্রাপ্য সুদ বা মুনাফার হার ৯ শতাংশ হয়, তাহলে প্রকৃতপক্ষে আপনার টাকা ২ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু যদি সুদ বা মুনাফার হার হয় ৫ শতাংশ তাহলে আপনার টাকা ২ শতাংশ কমে যাবে।

তাই সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একদিকে রিটার্নের হার বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে; অন্যদিকে কমিয়ে আনতে হবে ঝুঁকি। এই দুটির মধ্যে ভাল ভারসাম্য রক্ষা করা গেলে আপনি এগিয়ে যাবেন অনেকটা পথ।

সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি সহনীয় রেখে ভাল রিটার্নের উপায় হচ্ছে-এক জায়গায় সব সঞ্চয় বা সব বিনিয়োগ না করে একাধিক নিরাপদ জায়গা খুঁজে নেওয়া। মনে রাখতে হবে, বেশি রিটার্নের বিপরীতে ঝুঁকিও বেশি থাকে। তাই সঞ্চয়ের পুরো অংশকে এই ধরনের প্রোডাক্টে বিনিয়োগ না করে ছোট্ট একটি অংশকে এখানে বিনিয়োগ করা ভাল। বাকি অর্থ রাখা উচিত কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে।

অপব্যয় বন্ধ করুন

অপব্যয় হচ্ছে ধনী হবার পথে সবচয়ে বড় বাধা। অনেকেরই অপব্যয়ের স্বভাব আছে। প্রয়োজন নেই জেনেও অনেকে বাড়তি পোশাক বা দামি গেজেট কিনেন। কেউ কেউ অন্যের কাছে নিজেকে জাহির করার জন্য নানা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করেন। আবার অনেকে অসতর্কতা ও উদাসীনতার কারণে অপব্যয় বন্ধ করতে পারেন না। যেমন-বাথরুমের কাজ শেষ হওয়ার পরও কেউ কেউ বাতিটি নিভান না; পানির কলটি অকারণেই চলতে থাকে, কক্ষের তাপমাত্রায় সহনীয় হয়ে আসার পরও এসিটি বন্ধ করেন না। এসব অপব্যয়ের কারণে বাড়ি অর্থ গুণতে হয়, অথচ সে ব্যয়গুলো না হলে টাকাগুলো বেঁচে যেতে পারত। আর তাতে বাড়তো সঞ্চয় ও বিনিয়োগ।

কেনাকাটায় সতর্ক থাকুন

কেনাকাটায় একটু যত্নশীল ও সতর্ক থাকলে বেশ কিছু অর্থ সাশ্রয় করা যায়। একই পণ্য বিভিন্ন বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দামে কেনাবেচা হয়। একটু খোঁজখবর নিয়ে যেখানে মূল্য তুলনামূলক কম, সেখান থেকে ওই পণ্যটি কিনতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে সময় এবং যাতায়াতের খরচটি বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে।

পিক সিজনে অনেক পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকরকম বেড়ে যায়। তাই যেসব পণ্য সিজনের আগে-পরে কেনা যায়, সেগুলো তখন কিনে নিলে বেশ সাশ্রয় হবে। যেমন-রমজান মাসের আগে আগে ইফতার ও সেহরি সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়; ঈদ ও পুঁজার সময়ে বেড়ে যায় পোশাক, জুতা, ব্যগ ইত্যাদির দাম। চাইলে এসব পণ্যের অনেকগুলোই আপনি আগে আগে কিনে রাখতে পারেন।

অনেক সময় বিক্রেতারা নানা লোভনীয় অফার দিয়ে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। যেমন-২টি কিনলে ১টি ফ্রি অথবা কথিত বড় মূল্যছাড়। এসব প্রলোভনের ফাঁদে পা না দেওয়াই ভাল।

পরিকল্পনা করে এগুতে থাকুন

সঞ্চয়, বিনিয়োগ, কেনাকাটা ও পারিবারিক ব্যয়সহ অনেক কিছুই পরিকল্পনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তাই আপনি ৫ বা ১০ বছর বছর কোথায় পৌঁছাতে চান তার একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করুন। আর ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে সেটি বাস্তবায়ন করতে থাকুন। ধৈর্য্য ও নিষ্ঠা নিয়ে এগুতে থাকলে সাফল্য আসবেই।