যৌক্তিক ব্যয়ই হতে পারে সঞ্চয়ের ভিত্তি

বর্তমানে বিশ্ব একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছে। পণ্যের দাম ঊর্ধ্ব থেকে ঊর্ধ্বতর হচ্ছে। সেই তুলনায় মানুষের আয় বাড়ছে না, ঠিক এই মুহূর্তে আয় ব্যায় করে সঞ্চয় করা খুব কষ্টের। এখন শুধু মানুষের ভালো ভাবে বেঁচে থাকাই মূল উদ্দেশ্য।

মনে রাখতে হবে, আমরা এমন একটি সময় পার করছি, যখন সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরকার হয়তো বৈশ্বিক মন্দার চূড়ান্ত ক্ষতি থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। তবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় সঞ্চয়ের কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং আয় যা–ই হোক না কেন, কিছুটা সঞ্চয় আমাদের করতেই হবে।

আপনি ধূমপান করা ছেড়ে দিলেন বা কমিয়ে দিলেন কিংবা স্বল্প দূরত্বে রিকশা বা অন্য যানবাহন ব্যবহার না করে হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললেন। রেস্টুরেন্ট কিংবা ক্যাফেতে না গিয়ে ঘরে তৈরি খাবার খাওয়া, রান্নাবান্নায় তেলের পরিমিত ব্যবহার কিংবা ছুটির দিনে পরিবারের সদস্যরা বাসায় আলাদা কক্ষে না থেকে একসঙ্গে একটি কক্ষে বেশি সময় ব্যয় করলেও কিন্তু বিদ্যুৎ খরচ কম হবে।

আবার যাঁরা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহার করেন, তাঁরা তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির ওপরে রাখলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। বাসার অন্যান্য বিদ্যুৎ–চালিত যন্ত্র ব্যবহারে পরিমিত হোন। প্রয়োজন ছাড়া দিনভর বাসার সব বৈদ্যুতিক পাখা কিংবা টেলিভিশন ছেড়ে রাখবেন না। যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে সূর্যের প্রাকৃতিক আলো ব্যবহারের। গণপরিবহন ব্যবহারের মানসিকতা গড়ে তুলুন আর পাল্টে ফেলুন অপ্রয়োজনীয় শপিংয়ের অভ্যাস।

নিয়মিত খরচগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করুন। একই সঙ্গে কীভাবে খরচ যথাসম্ভব কমানো যায়, তা নিয়ে ভাবুন। লোকদেখানো খরচ একদমই করা যাবে না। এভাবে অভ্যাস বদলের মাধ্যমে সংকুচিত হতে পারে আপনার ব্যয়, যা দেবে আপনাকে কিছু সঞ্চয়ের নিশ্চয়তা।

আপনার আয়ের খাত নির্দিষ্ট একটি পেশায় সীমাবদ্ধ না রেখে সম্প্রসারণ করুন। প্রয়োজনে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ নিন। আয় বৃদ্ধি সঞ্চয় গড়ে তোলার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। নারী–পুরুষসহ পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে কর্মসংস্থানের জন্য অনুপ্রাণিত ও দক্ষ করে তুলতে হবে। কুটিরশিল্প, ফ্রিল্যান্সিং কিংবা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা বা কাজের মাধ্যমে ঘরে বসে রোজগারের উপায় বের করে নিতে হবে। তাহলে পরিবারের সামষ্টিক আয় বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি পরিবারের সবাইকে সঞ্চয়ী মনোভাবাপন্ন হতে উদ্বুদ্ধ করুন।

এসব তো গেল বাড়তি আয় কিংবা ব্যয় সংকোচনের উপায়। এখন প্রশ্ন হলো, উদ্বৃত্ত অর্থ কী উপায়ে সঞ্চয় করবেন কিংবা কোথায় গচ্ছিত রাখবেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক সে রকম কিছু পন্থা।

১. ক্ষুদ্র সঞ্চয় করুন। সেটা যদি অতি নগণ্য পরিমাণও হয়, ক্ষতি নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছোট আকারে মাসিক ভিত্তিতে ক্ষুদ্র সঞ্চয় কিংবা ডিপিএস স্কিম রয়েছে। আপনি যদি মাসে সামান্য কিছু টাকাও ব্যয় মিটিয়ে উদ্বৃত্ত রাখতে পারেন, তাহলে এ ধরনের স্কিম হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ।

২. বাসায় মাটির ব্যাংকেও টাকা জমাতে পারেন, আপনার যখন যেমন সুযোগ হয়। কিছুদিন পর জমানো টাকা ফিক্সড ডিপোজিট আকারে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখতে পারেন। মেয়াদ শেষে মুনাফাসহ আপনার গচ্ছিত টাকা ফেরত পাবেন।

৩. নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে সরকারি সঞ্চয়পত্রও কিনে রাখতে পারেন। বিভিন্ন মেয়াদ ও বৈশিষ্ট্যের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন আপনার নিকটস্থ কোনো ব্যাংক, সঞ্চয় অফিস কিংবা পোস্ট অফিস থেকে।

৪. জমানো টাকা থেকে অল্প অল্প করে কিছু প্রাইজবন্ড কিনে রাখতে পারেন। সঞ্চয় তো হবেই;ভাগ্য ভালো হলে পেয়ে যেতে পারেন পুরস্কার। নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে পেতে পারেন আর্থিক পুরস্কার। যেকোনো ব্যাংক কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহজেই কিনতে পারবেন প্রাইজবন্ড।

৫. শেয়ারবাজার সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ থাকলে কিংবা সীমাবদ্ধ জ্ঞান থাকলে, বিনিয়োগ করতে যাবেন না। তাতে হারিয়ে ফেলতে পারেন আপনার সব সঞ্চয়। তবে আপনার যদি শেয়ারবাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকে, সে ক্ষেত্রে আপনি ভালো ভিত্তির কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারেন।

৬. অননুমোদিত ও অবৈধ মাল্টিপারপাস সমবায় প্রতিষ্ঠানে আপনার কষ্টের অর্থ গচ্ছিত রাখবেন না। ভালোমতো দেখে–শুনে–বুঝে সিদ্ধান্ত নিন।

মনে রাখতে হবে, আজকের সঞ্চয় আমাদের আগামী দিনের বনিয়াদ। তাই নিজে সঞ্চয় করুন ও আপনার সন্তানকে সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা বোঝান। স্কুলজীবন থেকেই তাদের মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়ী করে গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে সন্তানের নামে স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলে দিন। তাতে সে নিজেই সঞ্চয় শুরু করবে। সঞ্চয়ের মাধ্যমে দূর করুন ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা।

 

এইচএআই