সংকটকালে স্বস্তি দিতে পারে বীমা

বীমা হল অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ন্যায়সঙ্গত ও নির্দিষ্ট ঝুঁকির স্থানান্তর। এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা বীমা প্রতিষ্ঠান অর্থের (প্রিমিয়ামের) বিনিময়ে মক্কেলের আংশিক বা সমস্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। এটি অনিশ্চিত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি অংশ। বিভিন্ন খারাপ সময় স্বস্তি দিতে বীমার ভূমিকা অপরিসীম।

দেশের সিংহভাগ মানুষের বীমা করার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভবিষ্যতের অনাকাক্ষিত কোনো পরিস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় তৈরি থাকা এবং বীমার উদ্দেশ্যও কিন্তু তাই। সুতরাং, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যেখানে বেশ কিছু আর্থিক দুশ্চিন্তা যুক্ত হয়েছে, সেখানে বীমা কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে। কেননা শুধুমাত্র সঞ্চয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকলে কোনো দুর্ঘটনায় বা পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অনুস্থিতিতে জমানো টাকার ওপর চাপ পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালের খরচ, সন্তানের লেখাপড়া চালানো, অবসরে নিশ্চিত থাকা বা মৃত্যুজনিত কারণে আর্থিক দুরবস্থা থেকে সুরক্ষা নিতে বীমা সাহায্য করে।

বীমার উপর মানুষের আস্থা নিশ্চিত করতে গ্রাহদের সেবা দেওয়া এবং বীমার টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়া যতটা দ্রুত ও স্বচ্ছ করা হবে, বীমার ব্যাপারে তত বেশি মানুষের মনে আস্থা তৈরি হবে। এবং বীমা কম্পানীগুলো সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। এতে করে সেবাকে আরও উন্নত ও ডিজিটাল হচ্ছে আর মানুষের কাছে আরো পৌঁছাচ্ছে। গ্রাহকরা যেমন অফিসে না এসেই বীমার প্রিমিয়াম দিতে পারছেন তেমনি অনলাইনেই বীমার দাবির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছেন। অনলাইনে বীমা দাবির করার ক্ষেত্রে গ্রাহকরা অল্প সময়ের মধ্যে তাদের বীমার টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। বীমাকে সহজ এবং স্বচ্ছ করার মাধ্যমেই এই গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সেবায় আস্থা বৃদ্ধি সম্ভব হবে।

অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় এখনো অনেকেই বীমাকে বেছে নেন না এবং এর কারণ হিসেবে রয়েছে বীমা নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণা এবং বীমার সুবিধা সম্পর্কে না জানা। তবে করোনা মহামারী চলাকালে বীমা না থাকার জন্য স্বাস্থ্যজনিত কারণে এবং হাসপাতালের খরচ মেটানোতে অনেকেরই আর্থিকভাবে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।  তাই এ সময়ে বীমার আর্থিক সুবিধার ব্যাপারে জানার জন্য আগের থেকে অনেক বেশি মানুষ আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বীমায় যে ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় সেটা হচ্ছে বীমার টাকা বা সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারে স্বচ্ছতা তৈরি এবং বীমাকে আরও সহজবোধ্য করে সবার সামনে তুলে ধরা। সম্প্রতি মিটলাইফের একটি অভিনব উদ্যোগ সেটি হলো বীমা নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম কমিকস বের করা।  হ্যালো বীমা নামের এই কমিকসটিতে বীমা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুব সহজভাবে জানবে সবাই।একই সঙ্গে তারা চালু করেছে হ্যালো বীমা হটলাইন যেখানে যে কেউ বিনামূল্যে কল করে বীমা নিয়ে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পাবেন।

বীমাতে মূলত সুবিধা দেওয়ার কারন মানুষ যাতে স্বাস্থ্যজনিত অনিশ্চয়তা থেকে স্বস্তিতে থাকতে পারেন। যেমন, মিটলাইফ চালু করেছে ‘ক্রিটিক্যাল ইলনেস ইন্সুরেন্স প্রটেকশন প্ল্যান’ যেখানে গ্রাহকরা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের অসুখ, ক্যানসার, কিডনির অসুখ এবং ডেঙ্গুসহ ৫২টি জটিল রোগে ৮০ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুরক্ষা পাবেন। দেশে এরকম বীমা এটিই প্রথম। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, জটিল রোগের দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা ভালো ফলাফল বয়ে আনে, যদিও এক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচের ব্যাপকতা ব্যক্তির সঞ্চয় এবং জীবনযাত্রার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রিটিক্যাল ইলনেস ইন্সুরেন্স প্রটেকশন প্ল্যান বীমা গ্রহীতাকে চিকিৎসা খরচ বহন করতে এবং অসুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

বীমা কম্পানীগুলো পর্যায়ক্রমে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ডিজিটাল হচ্ছে, অনেক সুবিধা দিচ্ছে এবং মানুষও সেসব জেনে বিমার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ সময়ের পরিকল্পনার মধ্যে বীমা এখন মানুষের খুবই বিশ্বস্তির জায়গা হয়ে উঠছে।