১৪ লাখ প্রবাসীকে বীমা সুবিধা দিচ্ছে জীবন বীমা করপোরেশন

জীবন বীমা এমন একটি চুক্তি যা একজন বীমা গ্রহীতা ও একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত হয়; যেখানে বীমা প্রতিষ্ঠান এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে যে বীমা গ্রহীতার মৃত্যু হলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বীমা গ্রহীতার উত্তরাধিকারীকে প্রদান করবে।

স্বাধীনতা-উত্তরকাল থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের বীমা খাত ছিল বেসরকারি খাতে। আদমজীর মতো বড় ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টের অধীনে ছিল। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর অনেক কোম্পানি এদেশ থেকে চলে গিয়েছিল। বিভিন্ন কারণে তারা শত্রুপক্ষ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু চিন্তা করলেন, জনগণের মধ্যে যাতে এগুলোর মালিকানা থাকে। তখন তিনি জীবন বীমা করপোরেশন গঠন করেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল এর মালিকানা যাতে জনগণের মধ্যে থাকে। এ উদ্দেশ্যেই তিনি জীবন বীমা করপোরেশন গঠন করেছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা করপোরেশনের অবদান প্রসঙ্গে মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশের সাধারণ মানুষকে আর্থিক অসচ্ছলতায় এবং দুর্যোগকালীন নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।  এরই মধ্যে সরকারি সিদ্ধান্তে আমরা প্রবাসী বীমা চালু করেছি। প্রায় ১৪ লাখ লোক এ বীমার আওতায় চলে এসেছেন। প্রতি বছর প্রায় ছয় লাখ লোক এ বীমার আওতায় আসছেন। জীবন বীমা করপোরেশন এই সেবা খুবই কমমূল্যে দিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত আমরা সব দাবি পরিশোধ করেছি।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মেডিকেল ইন্স্যুরেন্সের গুরুত্ব সম্পর্কে সাইফুল ইসলাম জানান, জীবন বীমার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যক্তির সুরক্ষা। যেকোনো সময় যে কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। সে সময় টাকার প্রয়োজনবোধ বেশি হতে পারে। আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যদি অসুস্থ হয় এবং তার যদি একটি লাইফ বা মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স থাকে, তখন চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে আপনার আর কোনো চিন্তা থাকে না। বিশেষ করে ক্যানসার, হৃদরোগ এই সমস্ত ক্ষেত্রে দেখা গেল পরিবারের সদস্যদের জন্য বড় ধরনের বিপদ হয়ে যায়, সময় ব্যয় হয়। আমাদের পরিকল্পনায় একটা ক্যাশলেস প্রজেক্ট আছে। যার বীমা থাকবে সে একটা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে একটা কাভারেজ পাবে। দুর্যোগকালীন তিনি আর্থিক নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। বীমা শিল্পের বিকাশ ঘটলে সামাজিক নিরাপত্তায় সরকারের বিনিয়োগও অনেক কমে যাবে।

‘আমাদের জীবন বীমার একটি ভালো পণ্য আছে, পেনশন পলিসি। বেসরকারি খাতে ৫৫ বছরের পর চাকরিজীবীরা আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আপনার বয়স ৪০ বছরের পরও যদি আপনি আয়ের একটা উপার্জন রাখেন বা আমাদের এখানে একটা প্রিমিয়াম জমা দেন, আপনার বয়স ৫০ বা ৫৫ হলে আপনি একটা পেনশন পাবেন। ৩০ হাজার টাকা করে আপনি আজীবন পেয়ে যাবেন।’

সরকারি প্রতিষ্ঠানটির জীবন বীমা তহবিল সম্পর্কে সাইফুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি ইন্সুরেন্স কোম্পানির মতো আমরা ব্যয় করতে পারি না। মার্কেটিং পলিসিও এক নয়। জীবন বীমার এখনো যে মার্কেটিং পলিসি তা আশির দশকের পুরনো। লাইফ ফান্ডের পরিমাণ যদি বাড়াতে হয় তাহলে পলিসি আরও সংস্কার করতে হবে। এটা নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। যেহেতু আমরা প্রতিযোগিতার মধ্যে আছি, আমরা ধীরে ধীরে ভালো করব। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়, সে লক্ষ্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছি।

আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের স্বল্প, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষকে জীবন বীমার আওতায় নিয়ে আসা। এক শ্রেণির মানুষের কাছে টাকা আছে, তাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যারা দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে যারা গ্রামে থাকেন তাদের সমস্যা বেশি। গ্রামের নিম্ন আয়ের সবাই যদি ১০০ টাকা করে সঞ্চয় করে, তখন তার আর্থিক নিরাপত্তা কঠিন কোনো বিষয় না। এমনিতেই বাঙালির সঞ্চয়ের ইচ্ছা কম। এটা করতে হলে শুধু আমাদের লোক দিয়েই হবে না, মিডিয়ার সহযোগিতাও লাগবে।

বীমা শিল্পের প্রসার বাড়ানো সম্পর্কে তিনি বলেন, ডিজাস্টার রিস্ক ইন্সুরেন্স চালু করতে পারলে সেটি আরও দারুণ হবে। শস্য বীমার কথাও চিন্তা করছি আমরা, যা এ মুহূর্তে খুবই প্রয়োজন। এখানে বিনিয়োগ করলে খুব ভালো রিটার্ন আসবে। কিন্তু বীমা পরিচালনার মতো দক্ষ জনশক্তি বাংলাদেশে এখনো গড়ে ওঠেনি।