স্কুল ব্যাংকিং ভাগ্য পরিবর্তনের চাবিকাঠি

স্কুল মানেই শিক্ষা জিবনের সূচনা। এখান থেকেই আমাদের শুরু হয় জীবনের নতুন নতুন ধাপ যা একের পর এক পড়ি দিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে। ছোট থেকে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কিছু শিখে থাকি। তার সাথে সাথে শিশুরা যদি সঞ্চয় করতে শিখে তাহলে তোরা ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পেয়ে যাবে।

ডেভ রামসের ভাষ্য মতে, ‘আপনার অর্থের ওপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে হবে অথবা এর অভাব আপনাকে চিরকাল নিয়ন্ত্রণ করবে।’ আমাদের সমাজব্যবস্থায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার সময়মতো সঞ্চয় না করার কারণে এবং পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে তারা সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবনে আশার আলো দেখাতে পারেন না। ফলে জন্ম হয় বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা। যার ফলে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় সন্তানের পড়াশোনা। এমতাবস্থায়, যেহেতু বাণিজ্যিক ব্যাংকে স্কুল ব্যাংকিং খোলার সুযোগ আছে, শিক্ষার্থীদের সরাসরি এ ব্যাপারে আগ্রহী করার মাধ্যমে তাদের পড়াশোনা সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা সম্ভব। আমরা সবাই জানি, ‘আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ’। একইভাবে আজকের শিশুর সাধ্যমতো সঞ্চয় ভবিষ্যতের উত্তম বিনিয়োগের সোপন। কাজেই  ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দু, গড়ে তোলে সিন্ধু’ কথার মতোই শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ বেশ মানানসই এবং সর্বমহলে স্বীকৃত।

২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে চালু হয় স্কুল ব্যাংকিং। এতে লেনদেন করার সুযোগ পায় ১১-১৭ বছর বয়সি তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থী, যাদের কোনো আয়ের উৎস নেই। এখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আগে ১০ টাকা লাগত, যদিও এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে ১০০ টাকা হয়েছে। এখানে লেনদেনের জন্য কোনো চার্জ কাটা হয় না। সাধারণত শিক্ষার্থীরা ঈদ, পূজা-পার্বণ কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে যে নগদ অর্থ পেয়ে থাকে অথবা স্কুল টিফিনের জন্য যে অর্থ পেয়ে থাকে, তা থেকে কিছু অর্থ বাঁচিয়ে রেখে তাদের নিকটস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক শাখায় যেন জমিয়ে রাখতে পারে—এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই স্কুল ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা ২০১১ সাল থেকে লেনদেন করার সুযোগ পায় স্কুল ব্যাংকিংয়ে। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০টি ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়।

উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, যেমন—অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে স্কুল ব্যাংকিং একটি জনপ্রিয় অর্থ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ হিসাবে পরিগণিত। বাস্তবিক অর্থে, স্কুল ব্যাংকিংয়ের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিয়মিত ব্যাংকে আসা-যাওয়া এবং লেনদেন করার সঙ্গে সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যেমন খুব অল্প বয়স থেকেই দক্ষ হয়ে উঠবে, একই সঙ্গে তারা পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের মূলধন গড়ে তোলার সুযোগ পাবে। যা পরবর্তী সময়ে আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থায় তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করবে এবং বিস্তৃত পরিসরে যা টেকসই উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। গবেষণা বলছে, উদ্যোক্তা হতে গেলে বয়স কোনো বিষয় নয়। দরকার শুধু সঠিক পরিকল্পনা, অভিনব আইডিয়া আর দৃঢ় মনোভাব এবং দক্ষতা প্রয়োজন; যা একজন তরুণ স্কুল ব্যাংকের হিসাব খোলাসহ অর্থ লেনদেন করার মাধ্যমে শিখতে পারে। আমেরিকান প্রভাবশালী উদ্যোক্তা ‘রন কনওয়ে’ নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘Any time is a good time to start a company’। কাজেই এই সত্য মানতে হবে, যখন তরুণদের কাছে পর্যাপ্ত মূলধন থাকে, তখন নিজেদের আইডিয়াগুলো সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে ব্যবহার করে তারা নিজেদের সফল উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে মূলধন জমানোর প্রশ্নে স্কুল ব্যাংকিং মানিব্যাগের মতোই ভূমিকা রাখতে পারে।

উপেক্ষা করার আদৌ সুযোগ নেই। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা বিনির্মাণে স্কুল ব্যাংকিং অনেক বড় ফ্যাক্টর। এর মাধ্যমে যেহেতু আগামী প্রজন্ম নিজেদের মূলধন দিয়ে নিজেরাই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার সুযোগ পাচ্ছে, তাই স্কুল ব্যাংকিংকে আখ্যায়িত করা যায় ‘ভাগ্য পরিবর্তনের চাবিকাঠি’ হিসেবে ।

তাই প্রতিটি বাবা মায়ের উচিৎ স্কুল ব্যাংকিং সম্পর্কে নিজে জানা আর তাদের শিশুটাকে জানানো। তাতে করে স্কুল ব্যাংকিংয়ের চাহিদা বাড়বে আর সমস্যাও।