কোন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কত

কোন সঞ্চয়পত্রে কত লাভ? সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার জেনে নিন। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরে বর্তমানে ১১টি সঞ্চয় স্কিম চালু আছে। এগুলোর মধ্যে চারটি সঞ্চয়পত্র, দুইটি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাব, একটি প্রাইজবন্ড, একটি ডাক জীবনবিমা এবং তিনটি প্রবাসীদের জন্য বন্ড। তবে সব কর্মসূচিতে বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ বা মুনাফার হার এক নয়। সুদের ওপর করহারও ভিন্ন ভিন্ন।

দেশে বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্রের মধ্যে রয়েছে: ১. পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র। ২. তিন মাস অন্তর মুনাফা-ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। ৩. পরিবার সঞ্চয়পত্র। ৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্র।

পেনশনার সঞ্চয়পত্র

পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ ৫ বছর। সঞ্চয়পত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ পাওয়া যায় পেনশনার সঞ্চয়পত্রে। যার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এখানে শুধুমাত্র অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরাই বিনিয়োগ করতে পারেন। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা মাসিক ও ত্রৈমাসিক উভয় ভিত্তিতে তোলা যায়। এ সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে অর্জিত সুদের ওপর কোনো উৎসে কর কাটা হয় না। এর বেশি বিনিয়োগে সুদের বিপরীতে উৎসে কর ১০ শতাংশ।

পরিবার সঞ্চয়পত্র

পরিবার সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে বছরভিত্তিক সুদ ভাগ করা আছে। যেমন প্রথম বছর শেষে ৯ দশমিক ৫০, দ্বিতীয় বছর শেষে ১০, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৫০ এবং চতুর্থ বছর শেষে ১১ শতাংশ। ১ লাখ টাকায় প্রতি মাসে সুদ ৯৬০ টাকা। উৎসে কর ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে সুদের ওপর ৫ শতাংশ, এর বেশি বিনিয়োগের সুদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ। এছাড়া পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা মাসিক কিস্তিতে তোলা যায়।

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙালে সুদ ১ম বছর শেষে ৯ দশমিক ৩৫, ২য় বছর শেষে ৯ দশমিক ৮০, ৩য় বছর শেষে ১০ দশমিক ২৫ এবং ৪র্থ বছর শেষে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ সঞ্চয়পত্রেও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ, এর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদের ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র শুধু সঞ্চয় অধিদফতর থেকে কেনা যাবে।

৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র

৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। যেকোনো শ্রেণি-পেশার নাগরিক এটি কিনতে পারেন। এ সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ ৩ বছর। তবে মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙালে কিছু সুদহার কম হবে। যেমন তিন বছর শেষে সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪, দুই বছর শেষে ১০ দশমিক ৫০ এবং এক বছর শেষে ১০ শতাংশ। ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে উৎসে কর ৫ শতাংশ, বিনিয়োগ এর ওপরে গেলেই উৎসে কর ১০ শতাংশ।

প্রবাসীদের বন্ড

প্রবাসীদের জন্য তিনটি বন্ড রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সুদ মিলে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে। এর সুদহার ১২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি এ বন্ডে ৬ মাস অন্তর সুদ তোলার সুযোগ রয়েছে।

ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মেয়াদ তিন বছর। এর সুদের হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রবাসীদের জন্য আরেকটি বন্ড রয়েছে, যার নাম ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড। এ বন্ডে বিনিয়োগে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। তবে তিনটি বন্ডের বিনিয়োগের বিপরীতে পাওয়া মুনাফা করমুক্ত রয়েছে।

এছাড়া ১০০ টাকার প্রাইজবন্ডের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর ড্র হয়। এর ওপর উৎসে কর ২০ শতাংশ।

ডাকঘর সঞ্চয়

ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় দুটি স্কিম রয়েছে। একটি সাধারণ হিসাব, অন্যটি মেয়াদি হিসাব। দেশের সব শ্রেণি-পেশার বাংলাদেশি নাগরিকই এ দুই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন। সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে সুদ সরল হারে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

মেয়াদি হিসাব তিন বছরের জন্য। এ হিসাবের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে তিন বছরের মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙানোর ক্ষেত্রে এক বছরের জন্য সুদ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং দুই বছরের জন্য ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ দুটির ক্ষেত্রেও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে পাওয়া সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ, এর বেশি বিনিয়োগের সুদের ওপর ১০ শতাংশ।

ডাক জীবনবিমায় পলিসি দুই ধরনের। একটি আজীবন ও অন্যটি মেয়াদি। যেকোনো নাগরিক যেকোনো ডাকঘরে ‘ডাক জীবনবিমা’ পলিসি করতে পারেন। পলিসির কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। আজীবন বিমার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে বছরে বোনাস পাওয়া যায় প্রতি লাখে ৪ হাজার ২০০ টাকা। আর মেয়াদি বিমার ক্ষেত্রে বছরে প্রতি লাখে পাওয়া যায় ৩ হাজার ৩০০ টাকা বোনাস। এ বোনাস করমুক্ত।

কীভাবে কিনবেন সঞ্চয়পত্র

সব ধরনের সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট ফরম রয়েছে। ওয়েবসাইট (nationalsavings.gov.bd) থেকে ডাউনলোড করেই এ ফরম পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে গ্রাহকদের প্রথমে এ ফরম পূরণ করতে হয়, সঙ্গে দিতে হয় গ্রাহক ও নমিনির পাসপোর্ট আকারের দুই কপি করে ছবি। গ্রাহকের ছবি সত্যায়িত করবেন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার মাধ্যমে। আর নমিনির ছবির সত্যায়ন করবেন গ্রাহক নিজেই।

সঞ্চয়পত্র কেনার সময় গ্রাহক ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে নমিনি যদি নাবালক হয় তাহলে জন্মনিবন্ধনের কপি লাগবে। পাশাপাশি লাগবে গ্রাহকের নিজ ব্যাংক হিসাবের চেকের কপি, যে অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের মুনাফা ও আসল টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে, ওই হিসাবের নম্বর দিতে হবে। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি কাগজ হিসেবে লাগে সর্বশেষ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সনদ।

সম্প্রতি সময়ে বেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এর ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু পরিবর্তন এনেছে সরকার।

সব শেষে প্রস্তাবিত বাজেটে দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বা পোস্টাল সেভিংস কিনতে হলে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নতুন নিয়মে একক নামে ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে এক কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। গ্রাহক পেনশনার হলে একক নামে এক কোটি এবং যৌথ নামে দেড় কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।