সচ্ছল জীবনের জন্য সঞ্চয়ের কোন বিকল্প নেই

সঞ্চয় সমৃদ্ধির সোপান। সচ্ছল জীবনের জন্য সঞ্চয়ের কোন বিকল্প নেই। ব্যক্তিজীবন থেকে পারিবাবারিক, ব্যবসাজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন, কোনটিতেই সঞ্চয় ছাড়া উন্নতি লাভের আশা করা যায় না। নানা কারণে মানুষ সঞ্চয় করার চেষ্টা করে। বিশেষ করে আমাদের দেশের মতো স্বল্প আয়ের দেশের নাগরিকদের জন্য সঞ্চয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিপদ-আপদের সময় যেটুকু সঞ্চয় থাকে, তা বেশ কাজে আসে। আমাদের দেশের মানুষের আয় বেশ সীমিত। বিশেষ করে যারা চাকরি করে নিজের সংসার পরিচালনা করেন, তাদের সঞ্চয় করা বেশ কঠিন। যা আয় হয় তার চেয়ে বেশি অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। তবুও মানুষ সঞ্চয় করার চেষ্টা করে। হঠাৎ পরিবারের কেউ জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হলে বেশ অর্থের প্রয়োজন হয়, তখন এই সঞ্চয় বেশ কাজে আসে।

সঞ্চয়ের সবথেকে বড় কারণ হলো গুরুত্বর অসুস্থতার যেন সঞ্চিত অর্থ কাজে আসে। দ্রুত চিকিৎসাসেবার জন্য সঞ্চয় তখন পরিবারের বড় সম্বল হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে সবাইকে নিজের চিকিৎসা ব্যয় নিজে গ্রহণ করতে হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকার সব মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় না। সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র বা হাসপাতাল রয়েছে, ডাক্তারও আছে, কিছু ওষুধও দেওয়া হয়; কিন্তু এসব সহযোগিতা সবাই তেমন কাজে লাগাতে পারে না। তাছাড়া সরকারি হাসপাতালে জনগণ আন্তরিকভাবে ডাক্তার ও নার্সের কাছ থেকে সেবাও লাভ করতে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে।

এছাড়াও আমাদের সঞ্চয়ের আরেকটি বড় কারণ হলো সন্তানের লেখাপড়া চালানো। এখন লেখাপড়া বেশ ব্যয়বহুল। ছেলেমেয়েদের প্রাইমারি শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা ও কলেজশিক্ষা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশে বা বিদেশে পড়াতে হলে বেশ অর্থের প্রয়োজন পড়ে। তাই ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য আয় থেকে প্রতি মাসে কিছু না কিছু অর্থ কোনো ব্যাংকে বা লিজিং কোম্পানিতে সঞ্চয় করা উচিত। যখন সন্তানের জন্য বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হবে, তখন এই সঞ্চয় বেশ কাজে লাগবে। সন্তানের সুশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার জন্য সঞ্চয় অতি জরুরি বিষয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা স্কিম নামে এবং লিজিং কোম্পানিতে বা ব্যাংকে সঞ্চয় করা যায়।

সঞ্চয় বিপদে বন্ধুর মতো। বিপদের সময় যা বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করবে। আমাদের দেশে ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিতে নানা সঞ্চয় স্কিম রয়েছে। কেউ সুদ পছন্দ না করলে সুদবিহীন ব্যাংক বা লিজিং কোম্পানিতে সঞ্চয় স্কিম গ্রহণ করতে পারেন। দেশে বেশ কয়েকটি সুদবিহীন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশের ভিত্তিতে সঞ্চয় সুবিধা দেবে, যা সুদ নয়। দেশে শরিয়াহ্ভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

সঞ্চয় করার জন্য উদ্দেশ্য থাকতে হবে। কিছু না কিছু সঞ্চয় করব, এ ধরনের ইচ্ছা থাকতে হবে। অথবা এই ইচ্ছাশক্তি সৃষ্টি করতে হবে। পড়াশোনা করে, বই পড়ে, বা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে সঞ্চয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

তবে মনে রাখতে হবে বেশি লাভের আশায় কখনও কোনো কো-অপারেটিভ বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্থ সঞ্চয় করা যাবে না। সরকারস্বীকৃত ব্যাংক বা লিজিং কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে করার চেষ্টা করবেন না। তাতে পুঁজি হারানোর ভয় থাকে। কয়েক বছর ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সাবধানতা অবলম্বন না করলে কষ্টার্জিত অর্থ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

এমআর