কেন নেবেন জীবন বীমা পলিসি?

আমাদের দেশে জীবন বীমা (Life Insurance) নিয়ে নানা ধোঁয়াশা রয়েছে, রয়েছে অনেক বিভ্রান্তি। অনেকে মনে করেন, এটি শুধুই বৃদ্ধ বয়সে একটু সহায়তার জন্যে। আবার কেউ কেউ ভাবেন, ১০, ১৫ বা ১৮ বছর পর মেয়াদ পূর্ণ হলে যে ক’টি টাকা পাবেন,তা অতি তুচ্ছ। বাস্তবে তা নয়। প্রায় এক ডজন বিষয় আছে, যেসব কারণে জীবন বীমার পলিসি নেওয়া উচিত।

যদি আপনি না থাকেন

মানুষের জীবন-মৃত্যু সবই সৃষ্টিকর্তার হাতে। আমরা কেউ-ই প্রিয়জনদের হারাতে চাই না। তবু এই নির্মম সত্যের মুখোমুখী আমাদের অনেককেই হতে হয়। ধরুন, এটি আমার-আপনার ক্ষেত্রে হলো। হঠাৎ করে আপনি বা আমি নেই। তখন শুধু প্রিয়জন হারানোর শোকের ধাক্কাই নয়, একটা আর্থিক সংকটের মুখোমুখীও আমাদেরকে হতে হয়। একটি জীবন-বিমা পলিসি এই ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের একটু সাহস জোগাতে পারে প্রাথমিক ধাক্কাটি সামলে নিতে।

নিয়ম অনুসারে,মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে পলিসিধারীর মৃত্যু হলে তার পরিবার পলিসির পূর্ণ অর্থ পেয়ে থাকেন। ধরা যাক,রফিক উদ্দিন ২০ লাখ টাকার একটি পলিসি করেছেন। মেয়াদের আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার পরিবার পুরো ২০ লাখ টাকাই পাবে, যা তাদের আর্থিক সংকটের তীব্রতা থেকে রক্ষা করবে।

চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহে সহযোগিতা

অনেক জীবন-বিমা পলিসিতে কয়েকটি রোগ চিকিৎসা ও দূর্ঘটনার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত থাকে। এমন পলিসির ক্ষেত্রে কেউ দূর্ঘটনায় পড়ে অঙ্গ হারালে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা পাবে। রফিক উদ্দিনের কথাই ধরা যাক। যদি তার পলিসিতে এ বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত থাকে, তাহলে দূর্ঘটনায় পড়ে হাতের কোনো একটি আঙ্গুল হারালে তিনি পলিসির মোট টাকা এক-চতুর্থাংশ পাবেন। তার ২০ লাখ টাকার পলিসির ক্ষেত্রে তিনি ৫ লাখ টাকা পাবেন।

কিডনি বিকল, হার্ট অ্যাটাকসহ কয়েকটি রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা বাবদ নির্দিষ্ট অংকের অর্থ পাওয়া যায়।

ঋণ পরিশোধে সহায়তা

কেউ-ই চায় না,নিজের মৃত্যুর পর পরিবার তার রেখে যাওয়া ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ুক। সে ঋণ হতে পারে আবাসন ঋণ,হতে পারে গাড়ি কেনার ঋণ,ব্যক্তিগত ঋণ অথবা ক্রেডিট কার্ডের ঋণ। নির্ভরশীলতার জায়গাটি হারিয়ে এমনিতে পরিবারের সদস্যরা অসহায় হয়ে পড়ে; তারউপর বড় অংকের ঋণের চাপ থাকলে তারা হিতাহীতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়বে। জীবন-বিমার পলিসির টাকা ঋণ শোধের মাধ্যমে তাদেরকে ভারমুক্ত করতে পারে।

দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক

জীবন-বিমা পলিসি দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। একটি ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনা,সন্তানের উচ্চ শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে দারুণ সহায়তা পেতে পারেন আপনি।

বেসরকারি চাকরিজীবীদের অবসর পরবর্তী সুবিধা

সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরের পর প্রভিডেন্ড ফান্ড,গ্রাচুইটি ইত্যাদির পাশাপাশি পেনশন সুবিধা পেয়ে থাকেন,যা তাদের অবসর পরবর্তী জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা দেয়। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ বেসরকারি চাকরিজীবী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জীবন-বিমা আপনার অবসর পরবর্তী জীবনে কিছুটা আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে।

কর সুবিধা

জীবন বিমার ক্ষেত্রে কিছু কর সুবিধা পাওয়া যায়। প্রতি বছর বিমার প্রিমিয়াম হিসেবে যে অর্থ জমা করা হয়,তা কর মুক্ত।

চাপে পড়ে সঞ্চয়

অনেক সময় জীবনে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আমা যা-ই আয় করি না কেন,তা নানাভাবে ব্যয় হয়ে যায়। দৈনন্দিন পারিবারিক ব্যয়,সন্তানের শিক্ষার খরচ,বিয়ের অনুষ্ঠান,জন্মদিন ইত্যাদি সামাজিকতা,বেড়াতে যাওয়া,নতুন আসবাব বা ইলেকট্রনিক গেজেট কেনা- ব্যয়ের জন্য খাতের অভাব নেই। এভাবে চলতে চলতে দেখা যায়, হিসাবের খাতা একেবারেই শূন্য। একটি জীবন বিমা পলিসি থাকলে সেটি সচল রাখতে বাধ্য হয়ে প্রিমিয়াম জমা দিতে হয়। আর এভাবে ধীরে ধীরে কিছু সঞ্চয় হতে থাকে,যা এক সময়ে বড় আকারে পরিণত হতে পারে।

ভবিষ্যত নিয়ে স্বস্তি

মৃত্যু অনিবার্য। এটিকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই মৃত্যু নিয়ে মানুষের মনে তেমন উদ্বেগ কাজ করে না। উদ্বেগ থাকে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ভবিষ্যত নিয়ে। নিজে না থাকলে কীভাবে তারা জীবনযাপন করবে,দৈনন্দিন চাহিদা মেটাবে তা নিয়ে দুর্ভাবনার শেষ থাকে না। একটি ভাল জীবন-বিমা পলিসি এই দুর্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। তাই যতদিন বেঁচে থাকা,ততদিন স্বস্তির সঙ্গেই বাঁচা সম্ভব।

সতর্কতাঃ

জীবন-বিমার সুবিধার অভাব নেই ঠিকই। তবে ভুল জায়গায় জীবন-বিমার পলিসি খুললে বা প্রতারক এজেন্টের কবলে পড়লে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। অনেক সময় পলিসিটি বাতিল হয়ে যায় অথবা কাঙ্খিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তাই পলিসি খোলার আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে হবে,তাদের ট্র্যাক রেকর্ড দেখতে হবে। আর ভালো করে পড়ে নিতে হবে বিমা-চুক্তির শর্তগুলো। বিমা-চুক্তির পাশাপাশি প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার রিসিপ্টগুলো সযতনে সংরক্ষণ করতে হবে।